রূপালী ব্যাংক ভুল বিনিয়োগের খেসারত দিচ্ছে
ভুল বিনিয়োগের খেসারত দিচ্ছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন রূপালী ব্যাংক। দেশে ভালো ভালো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থাকা (লিজিং কোম্পানি) সত্ত্বেও ব্যাংকটি বিনিয়োগের জন্য তুলনামূলক দুর্বলগুলোকে বেছে নিয়েছিল। স্থায়ী আমানত (এফডিআর) ও মেয়াদি আমানত বাবদ এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে রূপালী ব্যাংকের মোট পাওনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা। এতেই বড় বিপাকে পড়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত একমাত্র রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকটি। প্রতিষ্ঠানটি এখন লিজিং কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে আসল টাকা তো ফেরত পাচ্ছেই না, সুদও মিলছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক পরিদর্শন প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসে ১২০ কোটি, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিংয়ে ১০৬ কোটি ৭০ লাখ, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টে ১০৩ কোটি ১৬ লাখ ও বিআইএফসিতে ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে রূপালী ব্যাংক। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চার আর্থিক প্রতিষ্ঠানেরই মূলধন ঘাটতি ব্যাপক। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণও উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। শুধু তা-ই নয়, এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সব সূচকেরই ক্রমাবনতি হচ্ছে এবং এগুলোতে রূপালী ব্যাংকের বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে।
এ ছাড়া ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স ও ইউনিয়ন ক্যাপিটালে ১১টি এফডিআর বাবদ রয়েছে ১০৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে রূপালী ব্যাংক। ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর এসব এফডিআরের মেয়াদ শেষ হলেও সেগুলোর নগদায়ন ও নবায়ন কোনোটাই করা হচ্ছে না। এফডিআরগুলোর বিপরীতে অনাদায়ি সুদ হচ্ছে ৩৫ কোটি টাকা। এ টাকাও দিচ্ছে না আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এ সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টাকা আদায়ে রূপালী ব্যাংকের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে ১১টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কথা বলা হলেও ৭টির নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রূপালী ব্যাংক সাড়ে তিন বছর আগে বাংলাদেশ ব্যাংককে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমানতের বিপরীতে সঞ্চিতি রাখা এবং এই খাতে অর্জিত সুদ আয় খাতে না নিয়ে সাসপেন্স হিসাবে সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
এ ছাড়া আমানতগুলো আদায়ে ব্যাংকের সম্পদ ও দায় ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে তদারক করা এবং পরিচালনা পর্ষদে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে আদায়ের অগ্রগতি বাংলাদেশ ব্যাংককে জানানোর কথা থাকলেও এ ব্যাপারে রূপালী ব্যাংকের কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে রক্ষিত অর্থ আদায়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, রূপালী ব্যাংককে আরও বেশি ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা থেকে রক্ষার জন্য নতুন করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
এ নিয়ে যোগাযোগ করলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ গতকাল রোববার বলেন, ‘সাধারণত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করে থাকে স্বল্প মেয়াদে। এখানে যেটা মনে হচ্ছে, যারা টাকা নিয়েছে ও যারা টাকা দিয়েছে, তাদের মধ্যে অনৈতিক যোগসূত্র রয়েছে। এ যোগসূত্রের পরিণতিই হচ্ছে টাকা ফেরত না পাওয়া। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখের সতর্কতায় কাজ হবে না। দরকার আইনগত ব্যবস্থা।’
সাধারণত পর্ষদ সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না, এ সম্পর্কে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, তা দেখা যায় না বলেই তো সমস্যা প্রকট হয়েছে। অথচ এ টাকা জনগণের আমানতের টাকা। জনগণের আমানতের টাকা দায়িত্বজ্ঞানহীন ও হেলাফেলাভাবে একপ্রকার ঢেলে দেওয়া হয়েছে।
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
ডিমের দাম হালিতে ১০ টাকা কমলো
প্রতি ডজন ডিমের দাম একদিনের ব্যবধানেই ১৬৫ টাকা থেকে ২৫ টাকা কমে ১৪০ টাকায় বিক্রি হ...

ডলারের দাম ১০ টাকা কমেছে
প্রবাসী আয় রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়ায় বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে। যার কারণে হু হু...
আজ দেশব্যাপী চালু হচ্ছে ওএমএস
আজ ১ সেপ্টেম্বর থেকে দেশব্যাপী শুরু হচ্ছে খোলা বাজারে চাল বিক্রির কার্যক্রম (ওএমএস...
বছরে সোনা চোরাচালান হয় ৭৩ হাজার কোটি টাকার
প্রতিদিন অবৈধভাবে ২০০ কোটি টাকার সোনা আসছে দেশে। এই হিসেবে বছরে ৭৩ হাজার কোটি টা...

দেশে বেড়েছে কুরিয়ার খরচ
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে এবার বেড়েছে কুরিয়ার সার্ভিসে পণ্য পরিবহনের খরচ...
